সিবিএন ডেস্ক:
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেছে দলটি। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, “আপনার বিরুদ্ধে একটি নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. আখতার হোসেন আপনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান ও ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন। কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ‘রাজনৈতিক পর্ষদ’ ও তদন্ত কমিটির নিকট জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।”

একই সঙ্গে, অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সারোয়ার তুষারকে দলের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশও প্রদান করা হয়েছে।

তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সামনে আসে যখন সোমবার এক সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও চুম্বক অংশ প্রকাশ করেন, যেখানে তুষার কণ্ঠসদৃশ এক ব্যক্তি এনসিপির এক নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দিতে এবং গভীর রাতে তার ছবি চাওয়ার অনুরোধ করতে শোনা যায়।

পরে এনসিপির নেত্রী নীলা ইসরাফিল নিজেই ওই কথোপকথনের সত্যতা স্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি জানান, “নেপালে যাওয়ার পর থেকে তুষার প্রায়ই ফোন করতো এবং তার আলাপের ধরন পাল্টে যায়। সে আমাকে নানা রকম আপত্তিকর মন্তব্য করতে শুরু করে—‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘তোমার স্লোগান আমাকে আকৃষ্ট করে’, এমনকি গভীর রাতে আমার ছবি চাইতো।”

নীলা আরও বলেন, “আমি তুষারকে বারবার অনুরোধ করেছি আমাদের সম্পর্ক যেন শুধুই সাংগঠনিক ও ফর্মাল থাকে। কিন্তু সে বারবার সীমা লঙ্ঘনের চেষ্টা করেছে। এক পর্যায়ে রমজানের সময় সে একটি আপত্তিকর মন্তব্য করে, যার পর আমি তাকে স্পষ্ট জানাই যে, আমি আর কথা বলতে চাই না।”

নীলা জানান, এরপরও তুষার তার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এবং একসময় দাবি করে, ডিবি (ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ) তার সঙ্গে কথা বলেছে এবং সে নীলাকে নিজের ‘গার্লফ্রেন্ড’ হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সেই দীর্ঘ আলাপের মধ্যে ৪৭ মিনিটের একটি অংশ তিনি রেকর্ড করেন।

তিনি আরও বলেন, কোরবানির দিন রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে দেখা হলে তিনি ঘটনাটি তাকে জানান। পরে মহানগরের দায়িত্বশীল নেতাদেরও বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু তার পরদিনই অডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং নীলা নিজেই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার নারী সহকর্মীরাও আমার পাশে দাঁড়ায়নি।”

দলীয়ভাবে এ ঘটনায় তদন্ত চলমান রয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তবে বিষয়টি দলটির অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।